সিডি রম (CD ROM) কি? সিডি রমের গঠন, বৈশিষ্ট্য, ব্যবহার এবং সুবিধা ও অসুবিধা
সিডি রম (CD ROM) এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Compact Disk Read Only Memory। বর্তমানে কম্পিউটারের সবচেয়ে জনপ্রিয় বহনযোগ্য স্টোরেজ মিডিয়া হলো সিডি। সিডি রম একটি অপটিক্যাল মাধ্যম। সিডি ১২০ মিলিমিটার ব্যাস বিশিষ্ট গোলাকার একটি ডিস্ক যা ১.২ মিলিমিটার পুরু। এর কেন্দ্রে ১৫ মিলিমিটার একটি ছিদ্র আছে। সিডি হালকা পরিস্কার পলিকার্বনেট এবং মেটাল (অ্যালুমিনিয়াম) দিয়ে তৈরি। সিডিরমে ডেটা সংরক্ষণের জন্য লেজার রশ্মি নিক্ষেপণের মাধ্যমে অতি ক্ষুদ্র গর্ত সৃষ্টি করা হয় যা পিটস (Pits) নামে পরিচিত। একটি সিডিরমের ৭০০ মেগাবাইট পর্যন্ত ডেটা ধারণ ক্ষমতা আছে। এটি সহজে বহনযোগ্য ও আকৃতিতে ছোট। একটিমাত্র সিডিতে অনেক বেশি তথ্য রাখা যায়, তাই বর্তমানে সিডির ব্যবহার অনেক।
সিডি রমের গঠন
স্ক্যানার (Scanner) কি? স্ক্যানারের প্রকারভেদ, ব্যবহার
- সিডি রম চাকতিটির ব্যাস ৪.৭২ ইঞ্চি এবং পুরত্ব ১.২ মিলিমিটার। এর কেন্দ্রে ১৫ মিলিমিটার ছিদ্র থাকে।
- সিডির মধ্যবর্তী ছিদ্রের চারপাশে ৬ মিলিমিটার বেষ্টনীকে ক্লাম্পিং এরিয়া বলা হয়। এতে কোন তথ্য থাকে না।
- এরপর ৪ মিলিমিটার বেষ্টনীকে VTOC (Volume Table of Contents) বলা হয়। এরপরের ১ মিলিমিটার এলাকাকে Lead In বলা হয়। এর পর থেকে তথ্য ধারণ এলাকা শুরু হয়। এবং ৩৩ মিলিমিটার এলাকা তথ্য ধারণ করে। এর পরের শেষ ১ মিলিমিটার এলাকাকে Lead Out বলা হয়। এটি সিডির শেষ সীমানা নির্দেশ করে।
- তথ্য সংরক্ষণ বা লিখার জন্য লেজার রশ্মি ঐ মাধ্যমের সারফেস বা আস্তরণের নির্দিষ্ট প্যাটার্ন পুড়িয়ে দেয়। আবার ঐ সংরক্ষিত তথ্যকে পড়ার জন্য সিডি ড্রাইভ অন্য ধরনের লেজার রশ্মি ব্যবহার করে। এই রশ্মি সিডির আস্তরণকে স্ক্যান করে তথ্যকে চিহ্নিত করতে পারে।
- প্রথম প্রথম যেসব সিডি-রম বেরিয়েছিল তা থেকে শুধু তথ্য পড়া যেত, কিন্তু তাতে কোন তথ্য লেখা যেত না। বর্তমান নতুন ধরনের সিডি-রম বেরিয়েছে যাতে তথ্য বারবার লেখা যায় ও পড়া যায়; এগুলােকে বলা হয় সিডি-আর।
সিডিতে তথ্য রাইট করা
একটি জটিল প্রক্রিয়ায় সিডিতে তথ্য রাখা হয় এবং এসব তথ্য আবার পড়া হয়। খালি সিডি কম্পিউটারের সিডি রাইটার ড্রাইভে ঢুকিয়ে সিডি বার্ণিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে সিডির গায়ের উপরিভাগ যাকে সারফেস বলা হয় তাতে লেজার রশ্মির মাধ্যমে পুড়িয়ে তথ্য রাখা হয়। ধরা যাক একটি ডকুমেন্ট ফাইলকে সিডিতে রাখা হবে। প্রথমে ডকুমেন্টের লেখাগুলাে ডিজিটাল অর্থাৎ কতগুলাে 0 এবং 1 এ পরিণত হবে। সিডি ড্রাইভের ভিতরের লেজার রশ্মি সিডির সারফেসে কতগুলাে গর্ত করবে। গর্ত এর জায়গাকে পিট এবং গর্ত ছাড়া সমতল জায়গাকে ল্যান্ড বলা হয়। 0 এর জন্য পিট এবং 1 এর জন্য ল্যান্ড তৈরি করবে। এভাবে তথ্যকে অর্থাৎ 0 এবং 1 সিডিতে রাখবে অর্থাৎ সিডিতে তথ্য লিখবে।
সিডি থেকে তথ্য পড়া
সিডিতে তথ্য সংরক্ষণ করে পরবর্তীতে কম্পিউটারে তথ্য দেখা যায় অর্থাৎ তথ্য পড়া যায়। সিডি ড্রাইভে ঢুকালে সিডিটি ঘুরতে থাকে। ড্রাইভ থেকে লেজার রশ্মি মারা হয়। যখন লেজার বিমটি পিটস-এ আঘাত করে তখন এটি ছড়িয়ে যায়। কিন্তু যখন ল্যান্ডস এ আঘাত করে তখন এটি বিপরীত দিকে চলতে শুরু করে প্রিজমে আঘাত করে এবং এটি 90° Angle-এ ঘুরে লাইট সেন্সিং ডায়ােডে চলে যায়। যখন লাইট বিমটি আঘাত করে ডায়ােডটি তখন ইলেট্রিক পােল তৈরি করে। সহজ কথায় গর্ত জায়গা থেকে রশ্মি ফেরত আসে না অর্থাৎ এখানে 0 আছে বুঝে নেয় আর ল্যান্ড থেকে রশ্মি ফেরত আসে অর্থাৎ এখানে 1 আছে বলে ধরে নেয়। এভাবে সব কিছুকে অর্থাৎ ছবি, লেখা, ভিডিও ইত্যাদিকে ডিজিটাল তথ্য অর্থাৎ 0 এবং 1 এ রূপান্তর করে সিডিতে রাখা হয় এবং পরবর্তীতে লেজার বিমের সাহায্যে সিডি থেকে পড়া হয়।
সিডি রমের বৈশিষ্ট্য
- তথ্য ধারণক্ষমতা অনেক (৭০০ মেগাবাইটের মতো)
- সহজে বহন করা যায়।
- স্থায়িত্ব অনেক।
- মূল্য কম।
- একটিমাত্র সিডিতে প্রায় ৭০ মিনিটের চলচ্চিত্র এবং ১৮ শব্দ ধারণ করা যায়।
- তথ্য সংরক্ষণ করতে লেজার রশ্মি ব্যবহার করা হয়।
সিডি রমের ব্যবহার
সিডিতে অনেক তথ্য রাখা যায় বলে বর্তমানে এটি ব্যাপক ব্যবহৃত হচ্ছে।
- ডেটা স্টোরেজঃ সিডিতে লেখা, ছবি এবং শব্দ সংরক্ষণ করা যায়।
- মুভিসঃ বিভিন্ন চলচ্চিত্র সিডিতে পাওয়া যায়।
- সংগীতঃ বিভিন্ন মিউজিক, এমপিথ্রি ইত্যাদি।
- বুকসঃ ডাইরেক্টরি, বই, পিরিওডিকেলস
- সফটওয়্যার ও গেমসঃ কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন, গেম ও বিভিন্ন সফটওয়্যার।
- মাল্টিমিডিয়াঃ শিক্ষামূলক মাল্টিমিডিয়া সিডিতে পাওয়া যায়।
- বিশ্বকোষঃ এনসাইক্লোপিডিয়ার মতো বিশাল বিশাল ভলিউমগুলোকে একটিমাত্র সিডিতে বাজারে পাওয়া যায়।